Tuesday, March 6, 2007

বাঙ্গালী আধ্যাত্মিক?

পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি শহরে, গ্রামে, রাস্তায় অন্ততঃ একটি কালী মন্দির দেখা যায়। বাংলাদেশে আমি যাইনি, তাই অতটা বলতে পারব না। তবুও প্রতিটি শহরে বা গ্রামে একটা মসজিদ তো নিশ্চয়ই আছে। তাহলে তো মানতেই হয়, বাঙ্গালী আধ্যাত্মিক, তাই না?

না।

বাঙ্গালী আধ্যাত্মিক নয়। আধ্যাত্মিকতা মানে শুধু মন্দির, মসজিদ বা গীর্জা থাকা বা তাতে রোজ যাওয়া নয়।

সংসদ বাংলা অভিধানে আধ্যাত্মিক কথাটার অর্থ দেওয়া আছে 'আত্মাসম্বন্ধীয়; আত্মিক'। আত্মা কার আছে? সমস্ত জীবের। মানুষেরও।

আত্মা মানে কী? 'দেহের মধ্যে অধিষ্ঠিত চৈতন্যময় সত্তা, জীবাত্মা'। সুতরাং আধ্যাত্মিক কে?- যে নিজের চৈতন্যময় সত্তার (বা, বিবেকের) উন্নতি সাধনে রপ্ত থাকে।

আত্মার উন্নতি সাধন মানে, জগতের নিয়মের অধ্যয়ন করা এবং এর মাধ্যমে মনকে আত্মার অধীনে আনা। এই প্রসঙ্গে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আধ্যাত্মিকতা মানে শুধু দু'বেলা মাকালী (বা অন্যান্য হাজারো দেবদেবীর) পূজা করা বা নামাজ পড়া নয়। নিজের চৈতন্যময় সত্তার উন্নতি করাই আসল কাজ। পূজো বা নামাজ তার সঙ্গে চললে ক্ষতি নেই।

হিন্দু, মুসলমান, খ্রীস্টান -- এগুলো কোনও ধর্ম নয়। এগুলো সম্প্রদায়। ধর্ম হল জলের ধর্ম, আগুনের ধর্ম, পশুর ধর্ম - মানুষের ধর্ম। হিন্দু মানুষ, মুসলমান মানুষ, খ্রীস্টান মানুষ - সব মানুষের এক ধর্ম। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই - সব মানুষ দুঃখ পেলে কাঁদে, আনন্দ পেলে হাসে। আগুনে পুড়লে যে কোনও মানুষ ঝলসে যায়। অক্সিজেন ছাড়া যে সম্প্রদায়েরই মানুষ হোক না কেন, মারা যায়।

মানুষ ছাড়া, পৃথিবীর আর সব প্রাণী-অপ্রাণী নিজের নিজের ধর্ম মেনে চলে। একমাত্র মানুষেরই কাছেই তার নিজের ধর্ম পালন করা বা না করার বিকল্প থাকে। এরকম হবার একটা কারণ আছে, সে আরেকসময় আলোচনা করা যাবে।

বাঙ্গালীর আধ্যাত্মিকতা নেই। জগতের নিয়মই জানে না বাঙ্গালী। মনের ওপর কোনও দখল নেই বাঙ্গালীর। নিজের ভাল বোঝেনা। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, 'স্বার্থপর হও'। বাঙ্গালীর স্বার্থপরতা আসলে, স্বার্থহরতা। জগত তার নিয়মে চলে। সে নিয়মের ভুল হবার উপায় নেই। জগতের নিয়মের ফলেই বাঙ্গালীর আজ এই কষ্ট, এই দুঃখ।

জগতের নিয়ম বলে, 'যেমন কর্ম, তেমন ফল'। যা দেবে, তাই পাবে। অসম্মান দেবে, অসম্মান পাবে। আঘাত করলে, আঘাত পাবে। অন্যায় করলে, অন্যায় পাবে। দুঃখ দিলে, দুঃখ পাবে। ভালবাসলে, ভালবাসা পাবে। সাহায্য করলে, সাহায্য পাবে। দান করলে, ফেরত পাবে। বা, উলটো করে বলি, যা চাইবে, তাই দেবে। টাকা চাইলে, টাকা দাও (দান)। শান্তি চাইলে, শান্তি দাও। সাহায্য চাইলে, সাহায্য কর।

জগতের কিছুই চিরস্থায়ী নয়। যেমন কর্ম একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য করা হয়, তার ফলও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলি, কেউ একবার কাউকে সাহায্য করল (বিনা তথাকথিত স্বার্থে), সে একবার বা দুইবার সাহায্য পেল। তারপর একবার লোকের ক্ষতি করল, আবার এক বা দুইবার লোকে তার ক্ষতি করল।

খুব সহজ নিয়ম। বাঙ্গালী গত শত-হাজার বছর ধরে, যা দিয়ে এসেছে পৃথিবীকে, আজ তাই ফেরত পাচ্ছে। আবার আজ থেকে যদি পৃথিবীকে দেবার পদ্ধতি বদলে দেয়, বাঙ্গালী তারও প্রতিদান পাবে।

নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত দান (টাকা, ভালবাসা, শিক্ষা--যাই হোক না কেন) করা সহজ নয়। এর জন্য বিবেককে তৈরী করতে হবে, মনের উর্দ্ধে আত্মাকে (বিবেক) আনতে হবে। সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়।

মানুষ অভ্যেসের দাস। যা সওয়াবে তাই সইবে। এই বিকল্প আছে মানুষের ধর্মে।

Monday, March 5, 2007

একটা গল্প বলি -

একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় পড়েছিলাম। কার লেখা মনে নেই। পরে রেডিওতে নাটকও শুনেছিলাম। গল্পটা এইরকম-

একটি মেয়ের বিয়ের ঠিক করা হচ্ছে। সম্বন্ধ করে। কলকাতায়। সুন্দরী, শিক্ষিতা, উচ্চ বংশের। কাজেই ভাল পাত্রেরও অভাব নেই।

পাত্রের তালিকায় একটি মাঝারি কারখানার মালিক। সুন্দর, শিক্ষিত, উচ্চবংশের। কাজেই মেয়ে দেখতে গেল ছেলে নিজেই--কালো চকচকে বড় গাড়ি চালিয়ে, দামী স্যট-টাই পরে। মেয়েকে দেখে খুব পচ্ছন্দ। সেইদিনই পাকাকথা সেড়ে ফেলতে চান। কিন্তু মেয়ের বাবা বললেন, 'পরে জানাব'।

তারপর একদিন দু-লাইনের পোস্টকার্ড পেল, ছেলেটি। নাঃ, এই বিয়ে হলো না।

নিউ মার্কেট তখনও এখনকার মত হয় নি। এক বৈশাখে, সন্ধেবেলায়, নিউ মার্কেটে কিছু একটা কিনতে ছেলেটি একটা দোকানে ঢুকে এটা ওটা দেখছে, হঠাৎ দেখে সেই মেয়েটিও ঐ দোকানে, কিছু একটা কিনতে এসেছে। ছেলেটি আগবাড়িয়ে গিয়ে কথা বলল। জিজ্ঞেস করল, তাকে বিয়ে না করার কারণ কী। মেয়েটি কিছু না বলে ব্যাগ থেকে একটি খাম ছেলেটির হাতে দিয়ে বলল, 'আসবেন, আমার বিয়ে'।

ছেলেটি দুঃখ পেল। পাবারই কথা। একবার ভাবল, যাবে বিয়েতে, দেখবে, কে সেই ছেলে, যার জন্য সেই মেয়েটি তাকে বিয়ে করল না। তারপর কী ভেবে ঠিক করল, না, যাবে না।

বৈশাখ মাস, বিয়ের মরশুম। সবাই একটা না একটা নেমন্তন্ন পায়ই। ছেলেটির কারখানার ম্যানেজারের বউভাতের নেমন্তন্নও আছে লিস্টে। আবার এক দূর সম্পর্কের আত্মিয়ার বিয়ে। দুটোতেই যেতে হবে। ম্যানেজারের বউভাতে একটু পরে গেলেও হবে, এই ভেবে আগে আত্মিয়ার বিয়েটা দুটো মিস্টি-জল খেয়ে সেড়ে ফেলল।

ম্যানেজার আর তার অফিসের অন্যান্য কলিগেরা মিলে চোখ ধাঁধাঁন গেটের কাছে তাদের মালিকের আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। কালো গাড়ীটা আসতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠল। ম্যানেজার গর্বের সঙ্গে মালিককে নিজের বাবা-মা, কাকা, জ্যাঠা, যাকে সামনে পায়, তার সঙ্গেই আলাপ করায়। সবশেষে নিজের নববিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করায়।

পাঠককে এইটুকু নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না যে ম্যানেজারের স্ত্রীই আসলে সেই মেয়েটি।

এই গল্প এইখানে বলার উদ্দেশ্য হল, বাঙ্গালী চাকরী করা ছেলেকে বেশী সিকিওরড মনে করে, সেই চাকরীদাতা মালিকের তুলনায়ও।

তাই এখনও বাংলায়, ৫০০-৭০০ টাকা মাইনের কাজের লোক পাওয়া যায়। আমি এমন অনেক দেখেছি, যারা ২০০০ টাকা মাস-মাইনেতে চার জনের সংসার চালায়। সুখে থাকে?

তার মানে এই নয়, যে সুখে থাকতে গেলে টাকার দরকার হয়। সুখে থাকা এক জিনিস আর সংসার করা আরেক জিনিস। সংসার করতে গেলে টাকার দরকার হয়। আর ২০০০ টাকায় সংসার চলেনা।

যখনই প্রয়োজনের তুলনায় টাকা কম মনে হবে, তখনই দুর্নীতি আসবে। তাই বাংলায় খালি, অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম, অসততা আর অরাজকতা।

বাঙ্গালী ব্যবসা বিমূখ। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ব্যবসা ছাড়া সংসারের প্রয়োজন মেটান সম্ভব নয়। একমাত্র ব্যবসাই সৎভাবে অপরিমিত টাকা রোজকার দিতে পারে।

বাঙ্গালী ব্যবসামুখি হও।

Saturday, March 3, 2007

আসুন বাঙ্গালী, ব্যাবসা করুন



বাঙ্গালী বলতে আমি যাঁরা বাংলায় থাকেন তাঁদেরই বুঝি। আবার যাঁরা বাংলা ভাষা বলেন, তাঁদেরও বুঝি। কাজেই, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্লগ বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের জন্যেও।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "রেখেছ বাঙ্গালী করে, মানুষ করনি"।

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ আজ কেন এত পিছিয়ে আছে?

যে কোনও দেশের উন্নতির জন্যে অন্ততঃ তিনটি জিনিশের প্রয়োজন -
  • আধ্যাত্মিক উন্নতি
  • শারীরিক উন্নতি
  • আর্থিক উন্নতি
আধ্যাত্মিক আর শারীরিক উন্নতির কথা অন্য জায়গায় আলোচনা করা যাবে, এই বিভাগে খালি আর্থিক উন্নতির কথাই বলি।

আর্থিক উন্নতি মানে রাজ্যের বা দেশের প্রতিটি মানুষের আর্থিক উন্নতি। ব্যাবসা-বাণিজ্য-শিল্প ছাড়া আর্থিক উন্নতি সম্ভব নয়। বাঙ্গালী চিরকাল ব্যাবসা বিমুখ। তাই বাংলার উন্নতি নেই।

এই ব্লগে আমরা বিভিন্ন ব্যবসার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করব। প্রতিষ্ঠিত বাঙ্গালী (আমি আগেই বলেছি 'বাঙ্গালী' বলতে কি বুঝি) ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ, তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা এই ব্লগে লিখতে পারেন।

(ইংরেজীতেও লিখতে পারেন, কিন্তু বাংলা লিখতে চাইলে, অভ্র কী-বোর্ড ব্যবহার করতে পারেন।)